দ্বিতীয় পর্বঃ চল মেশিনকে কিছু শিখাই

রিফাতের মনে অনেকগুলো প্রশ্ন কেন জানি ঘুরপাক খাচ্ছে। কীভাবে সম্ভব। এরই মাঝে আজকেও আবার দেখা সজীবের সাথে। এখন রিফাতের মনে একটা দ্বন্দ্ব কাজ করে। এটা কী মানুষ সজীব নাকি রোবট সজীব। কিভাবে বুঝা যাবে বলুন তো। রিফাত মনে মনে ভাবে “উফ কী জ্বালায় পরলাম রে বাবা। এই সজীব কী মানুষ সজীব, নাকি একটা যন্ত্র। দেখি কথা বলে। ” এরই মাঝে সজীব কাছে এসে নিজে থেকেই বলে উঠল

সজীবঃ কী রে! আমি মানুষ নাকি একটা রোবট সেটাই ভাবছিস তাই না? আরে আমি মানুষ, রোবট না

একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে রিফাত বলল--

রিফাতঃ তো সন্দেহ করব না তো কী আনন্দে হাত তালি দিব। কী সব যা তা বলে গেলি গতকাল। তোর ঐ মানুষরূপী রোবট দেখে কী বুঝার উপায় আছে এটা যে তুই না।

সজীবঃ আচ্ছা অনেক হয়েছে, এবার চায়ের অর্ডার দে।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রিফাত আবার জিজ্ঞেস করে

রিফাতঃ আচ্ছা বন্ধু এটা কীভাবে সম্ভব যে একটা যন্ত্র মানুষ এর মতো হবে? কিভাবে এটা সম্ভব। এর শুরুটা কী? এমনি এমনি কী আকাশ থেকে একটা যন্ত্র চলে আসল যে মানুষ এর মতো হয়ে যাবে? মানে কীভাবে কী?

সজীবঃ দেখ, মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। মানে সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ চাইলে সব কিছুই করতে পারে। আচ্ছা তোকে একটা প্রশ্ন করি। মানুষ এর বুদ্ধি তো সকল প্রাণীর থেকে বেশি। কেন মানুষ এত বেশি বুদ্ধিমান? কেন মানুষ কে আল্লাহ আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন?

রিফাতঃ মানুষ জন্ম থেকেই বুদ্ধিমান। তাই।

সজীবঃ আচ্ছা সব মানুষ যদি জন্ম থেকে বুদ্ধিমান হয়ে জন্ম নিতো তাহলে সবাই কেন বড় বড় বিজ্ঞানী হয় না? সবাই কেন মেসি রোলান্ডো হয় না? কেন সবাই কবি সাহিত্যিক হয় না?

রিফাতঃ আসলে যারা তাদের ইচ্ছার মধ্যে সময় দেয় বেশি, ঐ সম্পর্কে অনেক বেশি জ্ঞান রাখে তারাই তাদের লক্ষ্যে অনেক ভালো করতে পারে।

সজীবঃ Exactly. মানুষকে আল্লাহ আশরাফুল মাখলুকাত করেছেন বা মানুষ সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয় কারণ সে ভাবতে পারে অনেক বেশি। চিন্তা করার ক্ষমতা অনেক বেশি। শেখার ক্ষমতা অনেক বেশি। ভালো করে খেয়াল কর। মানুষ যতো বেশি শেখে ঐ শেখাটা কাজে লাগাতে পারে, সে তত বেশি বুদ্ধিমান বা Intelegent. তাই না?

রিফাতঃ হ্যাঁ অবশ্যই। না শিখলে কীভাবে সে Intelegent হবে। কিন্তু শিখা মানে এখানে সব কিছুই শেখা বুঝায়। মানুষের সকল শিক্ষা। শুধু যে স্কুল কলেজের শিক্ষা বা পুঁথিগত শিক্ষা সেটা নয়। সকল শিক্ষা।

সজীবঃ হ্যাঁ আমার বন্ধু। তার মানে আমাকে Intelegent হতে হলে শেখা লাগবে এবং সেটা প্রয়োগও করা লাগবে।

রিফাতঃ হুম,তা ঠিক।

সজীবঃ Exactly এটাই আমরা করি প্রথমে। একটা রোবট Artificially Intelegent হতে হলে প্রথমেই অনেক বেশি বেশি শিখতে হবে। অনেক অনেক শিখতে হবে। আর আমরাই (মানে আমরা ইঞ্জিনিয়াররা) তাদের শিখাই। মেশিন কে শিখানোটা এতটাও সহজ কাজ না। তাই Artificial Intelegence এর মধ্যে একটা ভাগ আছে যেটা কাজ করে শুধুমাত্র মেশিন বা Robot কে শিখানো জন্য। মেশিন বা যন্ত্র বা রোবট যাই বলিস না কেন, এগুলোকে শিখানো কাজ করে Machine Learning (ML). মানে কীভাবে একটা মেশিন কে শিখাবে এই চিন্তা করেই দিন পারে করে এই ভাগটা।

রিফাতঃ আচ্ছা এবার বুঝলাম। মেশিন তাহলে হুট করেই শিখে না। একে শিখানো লাগে। মেশিনের এই শিখানো হলো Machine Learning. আচ্ছা আমরা যেভাবে শিখি সেভাবেই কী মেশিন শিখে?

সজীবঃ আচ্ছা তোর কাছে আমার প্রশ্ন। আমরা কীভাবে শিখি?

রিফাতঃ আমরা তো এমনি এমনি শিখি। এটা আবার কী ধরনের প্রশ্ন।

সজীবঃ সত্যি কী আমরা এমনি এমনি শিখি? ধর তোকে জিজ্ঞেস করলাম ২+২= ৪ এটা কীভাবে শিখলি?

রিফাতঃ আরে এগুলো তো পুঁথিগত বিদ্যা। বাদ দে তো স্কুল কলেজের কথা।

সজীবঃ 😂😂😂 আচ্ছা বাদ দিলাম। শুধু একটা কথা মাথায় রাখ যে আমরা কারো কাছ থেকে শিখি।

রিফাতঃ কিন্তু সব কিছুই যে আমাদের অন্যের কাছ থেকে শিখা লাগে এমন তো না। যেমন ধর আমি যদি আগুনে হাত দেই তাহলে ছ্যাঁকা লাগে। এটা তো কেউ আমাকে শিখায় নি। আমি নিজে নিজেই শিখেছি যে আগুনে হাত দিলে কষ্ট লাগে তাই আগুনে হাত দেওয়া যাবে না। ।

সজীবঃ Very good question my friend. আমরা অনেক উপায়ে শিখি। যেমন আমাদের শিখানো হয়। দ্বিতীয়ত যেটা তুই বললি। নিজে নিজে শিখি। কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করে দেখ যে তোর কী প্রথমেই জানা ছিল যে আগুনে হাত দিলে পুরে যাবে। তুই আগুনে হাত দিয়ে ছ্যাঁকা অনুভব করেছিস তাই তুই জানিস। অথবা তোকে যদি কেউ যেমন uncle বা aunty বলতো তাহলেই তুই জানতি। মেশিন আসলেই এই দুইভাবেই শিখে। অর্থাৎ আমাদের মতোই শিখে।

রিফাতঃ তাই নাকি জোস তো। 😳😳 তার মানে মেশিন ও আগুনে হাত দিয়ে শিখে 🤣🤣??

সজীবঃ এই দিকে বিজ্ঞান এতটাও উন্নত হয় নি। মানে রোবট নিজে থেকে এক্কেবারে শূন্য থেকে নতুন জিনিস শিখে না।

রিফাতঃ মানে কী? এই না বললি সে আমাদের মতোই শিখে। আমি আরও ভাবলাম আগে থেকে এখন রোবট রে দিয়েই বিষ খাইয়ে বলব। বল তো এটার স্বাদ কি?😝😜

সজীবঃ আচ্ছা একটু বুঝিয়ে বলি। তোর ঐ আগুনে ছ্যাঁকা খাওয়ার উদাহরণই দেওয়া যাক 🔥। তুই আগুনে হাত দিয়ে feel করলি যে এটা হাত পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানে কষ্ট হচ্ছে 😫। তার মানে এখান থেকে তুই কী শিখলই? আগুলে হাত দিয়ে রাখলে হাত পুড়ে যায়। এরপরের বার তুই যখনই আগুনে হাত দিতে যাবি তখন মনে পরে যাবে আগের বারের কথা যে আগুনে হাত দিয়েছিলি এরপর ছ্যাঁকা লেগেছিল। তাই না? মেশিনকে একই ভাবে শিখানো হয়। তাকে শিখানো হয় যে আগুনে হাত দিলে হাত পুরে যায়।

রিফাতঃ তাহলে মেশিন কীভাবে নিজে নিজে শিখল। এটা তো আমিই ওরে শিখাই দিলাম।

সজীবঃ Good Question. এবার তোরে আমি একটা ধাঁধা জিজ্ঞেস করি।
যদি 2 + 2 = A
3 + 3 = C
4 + 4 = E হলে
6 + 6 = ??

রিফাতঃ উমমম 🤔🤔। যদি 2+2=A; 3+3 = C তার মানে ১ ১ বেড়েছে কিন্তু A থেকে C তে মানে দুই ঘর সামনে। 4 + 4 আবার এক ঘরে করে আগালো মনে Alphabet এ দুই ঘর আগানোর কথা D বাদে E হওয়ার কথা সেটাই। তাহলে 5+5 হবে আরও দুই ঘরে বাদে মানে F বাদে G. আর ৬ + ৬ হবে H বাদে I
বন্ধু I 🙋‍♂️

সজীবঃ Very Good. আচ্ছা তুই কিভাবে করলি এটা?

রিফাতঃ আরে তুই তো কয়েকটা দিয়েই দিলি আমি সেখান থেকে প্যাটাররণ খুঁজে বের করলাম ব্যস

সজীবঃ আচ্ছা তোরে যদি আমি প্রথম দুইটা মানে 2 + 2 = A 3 + 3 = C না দিতাম তাহলে তুই পারতি?

রিফাতঃ ধুর কী যে বলিস। তাহলে pattarn কেমনে খুঁজে পাবো?

সজীবঃ এইভাবেই মেশিন নিজে নিজেই শিখে।

রিফাতঃ ছাতার মাথা কী বুঝাতে চাচ্ছিস ?? 😪😪😪

সজীবঃ এই দেখ তোরে আমি কয়েকটা দিয়ে দিলাম। এগুলো থেকে তুই নিজেনিজেই pattarn খুঁজে বের করলি। আমি কিন্তু বলে দেই নি যে Alphabet গুলো দুই দুই করে বাড়বে। তুই নিজে নিজেই সেটা বের করেছিস নিজে মাথা দিয়ে। Machine ও একই কাজ করে। প্রথমে তাক কিছু ডেটা দেওয়া লাগে (তোকে যেভাবে আমি দিয়েছি) এই দেওয়া ডেটা থেকে সে তোর মতো Pattarn খুঁজে বের করে তুই যেরকম নিজে নিজেই Pattarn বের করেছিস। এবং সেই Pattarn অনুজায়ী যে উত্তর অনুমান করে দেয়। এটাই হলো মেশিন লার্নিং (Machine Learning - ML)

রিফাতঃ আচ্ছা তাহলে এই কাহিনী। মধ্য কথা হলও আমি কিছু দিলে Machine সেটা থেকে pattern খুঁজে বের করবে। সেই pattern অনুযায়ী পরবর্তিতে অনুমান করবে।

সজীবঃ হ্যাঁ এটাই। “অনুমান করে” । অনুমান এক্কেবার ছক্কা হাঁকানোর মতো সহজ হতে পারে আবার কিছুটা ভুলও হতে পারে।

রিফাতঃ তারমানে আমি যদি আগে থেকে কোনো কিছু না দেই তাহলে সে পারবে না?

সজীবঃ না পারবে না। কারণ সে শিখবে না বা কী থেকে প্যাটার্ণ খুঁজে বের করবে সেটা পাবে না।

রিফাতঃ তার মানে আমাকে আগে থেকেই ডেটা থাকতে হবে।

সজীবঃ শুধু ডেটা থাকলেই হবে না। সেটার আউটপুট ও থাকতে হবে। মানে প্রশ্ন + উত্তর দেখে দেখেই Machine learn করে।

রিফাতঃ হুম অনুমান করা। pattern খুঁজে বের করা।

সজীবঃ তাহলে মেশিন লার্নিং এর মানে কী দাঁড়ালো।

রিফাতঃ পুর্বের ডেটা থেকে pattern খুঁজে বের করে অনুমান করা। কিন্তু সেই pattern আমরা দেই না। মেশিন নিজে নিজেই বের করে। [১]
তাহলে sumary এটা দাঁড়াল যে এটাও একটা AI যেটা মেশিনকে learn করায়।

সজীবঃ কিছুটা পরিবর্তন করলেই হয়ে যাবে। যেমন ML আর AI একই না। এটা AI এর একটা অংশ। যার কাজ হলও Machine কে শিখানো। [২]

রিফাতঃ মধ্য কথা আমাদের টার্গেট হলও Artificially intelegentএকটা robot বানানো যা আমাদের মতো মানুষকে mimic করতে পারে। এইজন্য প্রথমেই মেশিনকে learn করতে হবে যার কাজ করে AI এর একটা ছোট অংশ যাকে বলা হয় Machine Learning.

সজীবঃ হ্যাঁ। Machine Learning এর প্রধান কাজই হলো মেশিনকে এমনভাবে তৈরি করা যাতে সে Data থেকে তুই যেরকম Hidden pattern বের করেছিল সেইরকম Hidden Pattern/ লুকায়িত Pattern/ similarities between data খুঁজে বের করা বা এক কথায় আবিষ্কার করা। আওরা তাকে বলেই দেই না যে কী প্যাটার্ন রয়েছে।

১) Machine learning is the process of discovering hidden patterns from raw data without explicit programming." [1]

২) "Machine learning is a type/subset of artificial intelligence (AI) that allows software applications to become more accurate at predicting outcomes without being explicitly programmed to do so." [2]

Refernces


[1] T. M. Mitchell, Machine Learning. New York, NY, USA: McGraw-Hill, 1997.
[2] T. M. Mitchell, Machine Learning. New York, NY, USA: McGraw-Hill, 1997.
Next
Your Picture

Shahan Ahmed

Dept of Electrical and Computer Engineering
North South University
Dhaka, Bangladesh